মোস্তফা ওয়াদুদ : বছর ঘুরে আবারো দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। আনন্দের ঈদ। খুশির বার্তা। এদিন ধনী- গরীব, কৃষক-মজুর, মালিক-শ্রমিক, রাজা-প্রজা সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে ঈদগাহে যাই। নামাজ পড়ি। আল্লাহর ইবাদাত করি। নামাজ শেষে কোলাকুলি করি। সেদিন কারো মনে কোনো দুঃখ থাকেনা। বেদনা থাকেনা। থাকে না মনের ব্যাথা। আমরা গ্লানিগুলো ভুলে যাই।
এদিন আমাদের জন্য কয়েকটি কাজ করা উচিত। কাজগুলো পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১. সম্প্রীতিবোধ বা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন
২. ঐক্য বা সংহতি প্রকাশ
৩. দারিদ্র বিমোচন
৪. নতুন কাপড় উৎসব
নিম্নে বিষয়গুলো বিশদ আলোচনা করছি।
১. ঈদ পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে। ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। সম্প্রীতিবোধ, অপরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার উন্মেষ ঘঠায়। পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসার নিদর্শন স্থাপন করে। ঈদের দিনে সকল অহংকার, গৌরব, হিংসা-বিদ্ধেষ, রাগ-ক্ষোভ ভুলে যেতে হয়। যারা অন্যান্যদিন নিজেকে সাধারণ মানুষদের থেকে দূরে রেখেছেন, মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করতেন, তারাও পূণ্যের আশায়, সাওয়াবের প্রত্যাশায় সকল প্রকারের দম্ভমুক্ত হয়ে যান। বিনয়ী, সরলতা ও প্রীতিবোধ তৈরিতে মনোযোগী হোন। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ঈদ ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সম্প্রীতি ও সৌহার্দবোধ তৈরি করে।
২. ঐক্য বা সংহতি
ঈদের অপর নাম ঐক্য। বিশ্ব মুসলিমের জন্য আল্লাহর দেয়া বিধানাবলী সম্মিলিতভাবে বলার উত্তম মাধ্যম হলো ঈদের জামাত। বিশিষ্ট উর্দূ সাহিত্যিক মাওলানা মুহাম্মদ মিঁয়া রহ. এর ঐতিহাসিক গ্রন্থ “তারিখুল ইসলাম” এর ১৫০ নং পৃষ্ঠায় এ বিষয়টির আলোচনা রয়েছে। সেখানে তিনি বলেন, ঈদের অপর নাম ঐক্য। উদাহরণ হিসেবে বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলিম সমাজের প্রতিদিনের বন্ধনের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দিয়েছেন। এতে দৈনিক পাঁচবার মানুষের মাথে ঐক্য তৈরি হয়। এরপর সপ্তাহে একদিন জুমআর নামাজের বিধান দিয়েছেন। এতে একটি মহল্লা বা একটি পাড়ার মানুষের সাথে ঐক্য তৈরি হয়।
এভাবে সারাবছর পর একটি দিন সারা মহল্লার সকল মানুষের সাথে বন্ধনের জন্য, বা মিলনের জন্য, সর্বোপরি ঐক্য সৃষ্টির জন্য একটি সমাবেশ বা জামাতের ব্যবস্থা করে দিলেন। এই ব্যবস্থাটিই হলো ঈদের জামাত। আর বিশ্বমুসলিমের ঐক্যের জন্য রয়েছে পবিত্র হজ্ব। হজ্বের মাঝে বিশ্বের সব মুসলিম একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর বিধান পালন করে।
(তারিখুল ইসলাম,১৫০ পৃষ্ঠা)
৩. দারিদ্র বিমোচন
ঈদুল ফিতরে আল্লাহপাক দারিদ্র বিমোচন করার সিস্টেম করে দিয়েছেন। ঈদুল ফিতরকে ঈদুল ফিতর এজন্য বলা হয়, এদিন নেসাব পরিমাণ মালের মালিকদের উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তারা নিজেদের মাল সমাজের দরিদ্র শ্রেণির লোকদের মাঝে বিলিয়ে দেন। দরিদ্র মানুষ তাদের দেয়া সম্পদ নিজেদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ক্রয়ে ব্যয় করেন। এতে তাদের দারিদ্র বিমোচন হয়। তারা অভাববোধ করেন না। সারাবছরের চেয়ে একটু আপডেট হয়ে চলতে পারেন। ঈদের দিন সব প্রকারের কষ্ট ভুলে যান। ভালো করে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন। ঈদের দিন নতুনভাবে জীবন পরিচালনা করেন।
দ্বিতীয়ত রয়েছে ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহার দিনে নেসাব পরিমাণ মালের মালিকদের উপরে কুরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন। আর কুরবানীর পশুর চামড়া দরিদ্র লোকদের দিয়ে তাদের দারিদ্র বিমোচন করার সুযোগ পান।
সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন যাকাতের বিধান। ইসলামে যাকাতকে ফরজ করা হয়েছে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই রমজান মাসে যাকাত দিয়ে থাকেন। এতে দরিদ্র মানুষ অনেক উপকারী হয়। তাদের নিত্য চাহিদা পূরণ হয়।
৪. নতুন কাপড় উৎসব
ঈদের দিনে সবচেয়ে কারো জন্যে আনন্দের ও কারো জন্য কষ্টের যে বিষয় থাকে সেটা হলো নতুন কাপড় উৎসব। ঈদের দিন না ঈদের অনেক আগে থেকেই এ উৎসব শুরু হয়। নতুন জামা কেনার হিরিক পড়ে। মার্কেটে, বাজারে ও কাপড়ের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভীড় থাকে। এ সময় ধনীদের পদচারণাই বেশি থাকে। তারা প্রতি বছর নতুন কাপড় কিনে থাকেন। নতুন ভাবে রিজেকে উপস্থাপণ করেন। কিন্তু একই সমাজে বসবাস করে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নতুন জামার স্বাদ উপভোগ করতে পারেনা। পুরাতন জামাটিই সেলাই করে নতুনভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। সমাজের বিত্তবানদের উচিত দরিদ্র, খেটে খাওয়া, দিন মজুর ও সাধারণ মানুষদের প্রতি লক্ষ রাখা। সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েরা যেনো ঈদের দিন নতুন জামা গাঁয়ে দিতে পারে। নতুনভাবে সবার সাথে ঈদগাহে হাজির হতে পারে। ঈদের নামাজ শেষে অন্যদের সামনে যেনো কোনোভাবেই তাদের দুঃখ পেতে না হয়। বরং সবার সাথে এক কাতারে যেভাবে নামাজ আদায় করেছে। সেভাবে যেনো নামাজ শেষে কোলাকুলিও করতে পারে।
যদি বিত্তবানরা দরিদ্রশ্রেণির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। দয়ার হাত প্রশস্থ করে। তাহলে ঈদের শিক্ষা স্বার্থক হবে। স্বার্থক হবে সমাজে ঐক্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা।